ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবাসিক ভবন যমুনার নিচতলার গ্রিল কেটে শিক্ষকের বাসায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। বুধবার (৬ জুলাই) চুরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিকিউরিটি ইনচার্জ আবদুস সালাম (সেলিম)। এ নিয়ে আতংকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তাদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে প্রায়ই ঘটে চুরির মত ঘটনা উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় বারবার একই ঘটনা ঘটছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা।

সিকিউরিটি ইনচার্জ সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক যমুনা ভবনের নিচ তলায় চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোররা ভবনের পিছনের বেলকুনির গ্রিল কেটে ভেন্টিলেটর ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে রুমের সবকিছু তছনছ করে ফেলে। রুমের ট্যাপগুলো চুরি করে নিয়ে যাওয়ায় পুরো রুম পানিতে ভেসে গেছে। ঈদের ছুটি উপলক্ষে তারা বাসায় না থাকায় কি কি জিনিসপত্র চুরি হয়েছে তা জানা যায়নি।

ওই ভবনে থাকতেন ধর্মতত্ত্ব অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এইচ.এ.এন.এম এরশাদ উল্লাহ। তবে কবে নাগাদ চুরির ঘটনা ঘটেছে বিষয়টি জানা যায়নি। ধারনা করা হচ্ছে এর আগে গত ৩জুলাই দুইজন চোর ধরা হয়েছিল। পরে তাদের থানায় নেওয়া হয়।

আর চুরি না করার শর্তে লিখিত দিয়ে তাদের স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বার ছাড়িয়ে নেন। ওইদিন রাতেই এদের মাধ্যমে এই চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

তথ্য সূত্রে জানা যায়, যমুনা ভবনের ২য় তলায় বিশ্ববিদ্যালয় সিকিউরিটি ইনচার্জ আবদুস সালাম (সেলিম) ও একই ভবনের চতুর্থ তলায় বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর ড. শফিকুল ইসলাম থাকেন। তারা সেখানে অবস্থান করা সত্ত্বেও কবে নাগাদ চুরি হয়েছে কারা চুরি করেছে এ বিষয়ে তারা অবগত ছিলেন না বলে জানা গেছে।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, মাইকিং করে বিশ্ববিদ্যালয়ে বহিরাগত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গত ২জুলাই ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক থেকে শান্তিডাঙ্গা ও শেখপাড়া এলাকায় এ ঘোষণা দেওয়া হয়।

এছাড়াও ক্যাম্পাসের ভিতরে প্রায়ই ঘটে চুরির ঘটনা। এসব ঘটনা ঘটলেও অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যা নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ক্যাম্পাসে মাইকিং করে বহিরাগত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা কিছু শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের পাশেই মেসে অবস্থান করছি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করা যায়না।

মাঠে খেলতে যাওয়ার অনুমতি নেয়ার জন্য কতো না কাহিনি। মনে হচ্ছিল ইবিকে চার -পাঁচ স্তরের হাই সিকিউরিটিতে সাজানো হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশে এত নিয়ম তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে চুরির মত ঘটনা কিভাবে ঘটে? তাহলে কী ক্যাম্পাসের নিরাপত্তাহীনতা প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যায়!

চুরির ঘটনায় প্রফেসর ড. এইচ.এ.এন.এম এরশাদ উল্লাহ বলেছেন, আমি গতকাল জেনেছি আমার বাসায় চুরি হয়েছে। কবে নাগাদ আর কি কি চুরির ঘটনা ঘটেছে তা আমি জানিনা। আজ (৬ জুলাই) বাসার লোকজন সেখানে যাচ্ছে তখন জানা যাবে।

তিনি আরো বলেন, আমি শুনলাম রুমের ভিতরে তছনছ করা হয়েছে জিনিসপত্র গুলো। ক্ষতি অবশ্যই কিছু না কিছু হয়েছে। আমরা তো ভাড়া দিয়ে থাকি বাসা ভাড়া নাকি আবার বাড়ানোর চিন্তা ভাবনা করছে কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় যদি দায়িত্ব না নিতে পারে তাহলে কেমনে হইলো! এরকমটা হলে ভিতরের নিরাপত্তা প্রশ্নবিদ্ধই থেকে যায়।

গত ৩জুলাই দুইজন চোর আটক করা হয়েছিল। তাদের নামে মামলা হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ইবি থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, মামলা হওয়ার কথা ছিল তাদের দুইজনের নামে। প্রক্টরিয়াল বড়ির ৪জন এসে মুচলেকা দিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

সহকারী প্রক্টর শফিকুল ইসলাম (দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রক্টর) বলেন, শিক্ষকদের আবাসিক ভবনে চুরির ঘটনাটি কালকে সন্ধ্যায় শুনেছি। পরে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। নীচতলায় অবস্থানরত শিক্ষক ঢাকাতে অবস্থান করছেন। এজন্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে সঠিক কিছু বলা যাচ্ছে না।

মুচলেকা দিয়ে আটক দুই চোরকে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আটককৃতদের একজন ছোট ছিলো। তারা ভ্যানচালক। তাদের কাছে কোন মালামাল ছিলো না।

পরে তাদের মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। স্থানীয় চেয়ারম্যান মেম্বাররা উপস্থিত হয়ে পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে না ঢুকার শর্তে তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, তাদের সঙ্গে জিকু নামে আরেকজন ছিলো। তার নামে এজহার করা। সে ক্যাম্পাসের বঙ্গবন্ধু হল পকেট গেট দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে খুজে বেড়াচ্ছে